চারিদিকে করোনার কারণে জ্বরের সাথে সাধারণ জ্বর ও হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত। কিন্তু জ্বর মানেই করোনা নয় এর মধ্যে কেউ চিকনগুনিয়া বা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।পরিবারে একজনের জ্বর হলে বাকিরাও অতি তাড়াতাড়ি জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে রাজধানী সহ দেশের অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে জ্বরের রোগীর ভিড় বাড়ছে। বাড়ছে করোনা টেস্ট ও।তাই এই সময়ে একটু সতর্ক ও সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসরা।
চিকুনগুনিয়াঃ
চিকুনগুনিয়া এক ধরণের ভাইরাসজনিত রোগ। সাধারণত এই রোগ আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াই দেখা গেলেও বর্তমানে আমাদের দেশেও এখন এই রোগটি দেখা যাচ্ছে। চিকুন ডেঙ্গুর সঙ্গে এর অনেকটাই মিল রয়েছে। ভাইরাসটি এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ানো মশাটি সুস্থ কাউকে কামড়ালে তার শরীরেও চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ ঘটে। চিকুনগুনিয়া মানবদেহ থেকে মশা এবং মশা থেকে মানবদেহে ছড়ায়।
চিকনগুনিয়ার লক্ষণঃ
১) হঠাৎ জ্বর আসা সঙ্গে প্রচণ্ড গিঁটে গিঁটে ব্যথা।
২) প্রচণ্ড মাথাব্যথা
৩) শরীরে ঠাণ্ডা অনুভূতি
৪) বমি বমি ভাব অথবা বমি
৫) চামড়ায় লালচে দানা
৬) মাংসপেশিতে ব্যথা
এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা হয়। এমনকি ফুলেও যেতে পারে। জ্বর সাধারণত দুই থেকে পাঁচ দিন থাকে। এরপর ভালো হয়ে যায়। তবে তীব্র অবসাদ, পেশিতে ব্যথা, অস্থিসন্ধির ব্যথা ইত্যাদি জ্বর চলে যাওয়ার পরও কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে, মাসের পর মাসও অস্থিসন্ধিতে প্রবল ব্যথা হয়। এমনকি ফুলেও যেতে পারে। এতে রোগীর সাধারণত কাজকর্ম করতে অসুবিধা হয়। রোগী ব্যথায় এতই কাতর হয় যে হাঁটতে কষ্ট হয়। সামনে বেঁকে হাঁটে। স্থানীয়ভাবে কোথাও কোথাও তাই একে ‘ল্যাংড়া জ্বর’ বলা হয়।
১। এডিস মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া হয় বলে এ থেকে বাঁচতে এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস ও মশা নির্মূল করা উচিত।
২। রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে এবং প্রচুর পানি, ফলের জুস বা অন্যান্য তরল খেতে দিতে হবে।
৩। সংক্রমিত অবস্থায় সব ধরনের সামাজিকতা এড়িয়ে চলুন।
৪।চিকুনগুনিয়া জ্বর হলে বাড়িতেই চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। এই রোগের নির্ধারিত কোনো চিকিৎসা নেই।
৫। সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট হিসেবে প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধই যথেষ্ট। এতে জ্বরের পাশাপাশি ব্যথাও কমে যায়।
৬। ব্যথা বেশি হলে এনএসএইড ছাড়া সাময়িকভাবে ট্রামাডল গ্রুপের ওষুধ দেয়া যেতে পারে।
৭। গলা ব্যথা থাকলে লবণ ও গরম পানি দিয়ে ঘন ঘন গার্গল করতে হবে।
প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণঃ
১। মশার কামড় থেকে সুরক্ষাই চিকুনগুনিয়া থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায়। শরীরের বেশির ভাগ অংশ ঢাকা রাখা , প্রয়োজন ছাড়া দরজা জানালা খোলা না রাখা, ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা, শরীরে মশা প্রতিরোধক ক্রিম ব্যবহার করার মাধ্যমে মশার কামড় থেকে বাঁচা যায়।
২। মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে। বাসার আশপাশে ফেলে রাখা মাটির পাত্র, কলসী, বালতি, ড্রাম, ডাবের খোলা ইত্যাদি যেসব জায়গায় পানি জমতে পারে, সেখানে এডিস মশা প্রজনন করতে পারে। এসব স্থানে যেন পানি জমতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৩। চিকুনগুনিয়ার উপসর্গগুলো দেখা দিলে এক সপ্তাহের মধ্যে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে ভাইরাসটি পরীক্ষার মাধ্যমে সনাক্ত করা যায়।
৪। চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা মূলত উপসর্গ ভিত্তিক। এর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে এবং প্রয়োজনে জ্বর ও ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেট এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ওষুধ খেতে হবে।.
৫।গিটের ব্যথার জন্য গিঁটের উপরে ঠাণ্ডা পানির স্যাঁক এবং হালকা ব্যায়াম উপকারী হতে পারে। তবে প্রাথমিক উপসর্গ ভালো হওয়ার পর যদি গিঁটের ব্যথা ভালো না হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। কোনো কারণে রোগীর অবস্থা অবনতি হলে দ্রুত নিকটস্থ সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে।
চিকনগুনিয়ার লক্ষণ সমূহ
প্রতিরোধঃ
মশাবাহিত রোগ হওয়ায় খুব সহজেই চিকনগুনিয়া প্রতিরোধ করা যায়। এডিস মশা দিনে কামড়ায়, তাই দিনের বেলা সতর্ক থাকুন। এ সময় ঘুমালে মশারি ব্যবহার করুন। মশার বংশ বিস্তার এড়াতে ঘর বা আশপাশে পানি জমিয়ে রাখবেন না।
কোনো ব্যক্তি একবার চিকনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত হলে পরবর্তীতে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। তাই যেহেতু এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে সেহেতু আপনাকে সচেতন হতে হবে। তবে, চিকনগুনিয়া মরণঘাতী নয়
চিকনগুনিয়ার লক্ষণ সমূহ,ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার,ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ সমূহ,করোনার লক্ষণ,টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ,চিকুনগুনিয়া চিকিৎসা,ডেঙ্গু কেন মানুষের জন্য বিপদজনক,ডেঙ্গু জ্বর কেন হয়,ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা