চিকুনগুনিয়া এক ধরনের মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ।এই রোগ এর কারণে তেমন মৃত্যু ঝুকি না থাকলেও শরীরে অন্যান্য রোগের কারণ হতে পারে।ডেঙ্গুর সঙ্গে এর বেশ কিছুটা মিল রয়েছে। ডেঙ্গুর মতোই এ ভাইরাসটিও এডিস ইজিপ্টাই এবং এডিস অ্যালবপ্টিকাস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে মাথা ব্যথা, সর্দি, বমি বমি ভাব, হাত ও পায়ের গিঁটে এবং আঙুলের গিঁটে ব্যথা, ফোসকা পড়া এবং শরীর বেঁকে যেতে পারে।
সাধারণত ভাইরাস জ্বর বা ডেঙ্গু জ্বর হলে সেরে যাওয়ার পরও অনেক সময় শরীর সুস্থ হয় না। যে কোনো ভাইরাস অথবা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। যদি জ্বর সেরে গেলেও রোগী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ও দুর্বলবোধ করছেন, বিশেষ করে শরীরের বিভিন্ন গিটে গিটে ব্যথা, দুর্বলতা এবং ক্লান্তি খুব ভোগায় তবে এসকল ক্ষেত্রে ডেঙ্গু হিসেবে সন্দেহ করা হলেও এ রোগটি সম্ভবত ডেঙ্গু নয়, এটি চিকুনগুনিয়া নামক একটি মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ।
চিকনগুনিয়ার লক্ষণঃ
১) হঠাৎ জ্বর আসা
২) প্রচণ্ড মাথাব্যথা
৩) শরীরে ঠাণ্ডা অনুভূতি
৪) বমি বমি ভাব অথবা বমি
৫) চামড়ায় লালচে দানা
৬) মাংসপেশিতে ব্যথা
চিকুনগুনিয়া জ্বরের চিকিৎসাঃ
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা বিশেষ করে ভাইরাস পৃথকীকরণ, RT-PCR কিংবা সেরোলজির মাধ্যমে এ রোগ শনাক্ত করা যেতে পারে। রোগীর রক্তে ভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া এন্টিবডি দেখে এ রোগ সনাক্ত করা যেতে পারে। এতে ২ থেকে ১২ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
চিকনগুনিয়া রোগের কোনো প্রতিষেধক নেই এবং কোন টিকাও এখনও পর্যন্ত আবিস্কার হয়নি। এ রোগে আক্রান্ত রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে এবং প্রচুর পানি বা অন্যান্য তরল খাবার দিতে হবে। জ্বরের জন্য সাধারন প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধই যথেষ্ট। মাঝে মাঝে পানি দিয়ে শরীর মুছে দেয়া যেতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথার ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। নিজে নিজে কোন ওষুধ না খাওয়াই ভাল।
রোগীকে যেন মশা না কামড়ায় এ জন্য রোগীকে অবশ্যই মশারির ভেতরে রাখতে হবে। কারণ- আক্রান্ত রোগীকে কামড় দিয়ে, পরবর্তীতে কোনো সুস্থ লোককে সেই মশা কামড় দিলে ওই ব্যক্তিও এ রোগে আক্রান্ত হবেন
সাধারণত এ রোগ হলে ডাক্তারা বড়দের জন্য ১০২ ডিগ্রির উপর জ্বর ও ব্যথা থাকলে প্যরাসিটামল ২+২+২ পর পর তিন দিন খাবার পরে/সাপজিটর ৮ ঘণ্টা অন্তর, শুধু ব্যথা থাকলে পরবর্তী তিনদিন (খাবার পরে ১+১+১) দিয়ে থাকেন। ছোটদের জন্য ১+১+১ প্যরাসিটামল খাবার পরে দিয়ে থাকেন।
তবে শিশুদের ক্ষেত্রে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা নেয়া উচিৎ। এসময় এস্পিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। প্রচুর তরল খাবার গ্রহণ, লেবু জাতীয় ফল, পেয়ারা ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল উপকারে আসে। এরোগ হলে নবজাতক, যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ আছে তাদের একটু বেশি হুঁশিয়ার থাকতে হবে এবং তাদের সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শে থাকতে হবে।
প্রতিরোধঃ
চিকুনগুনিয়া যেহেতু এডিস মশাবাহিত রোগ, তাই মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করা যেতে পারে।
১। ঘুমানোর সময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো, লম্বা হাতাযুক্ত জামা ও ট্রাউজার পরে থাকা, বাড়ির আশেপাশে পানি জমতে না দেয়া ইত্যাদি।
২।শুধু স্ত্রী জাতীয় এডিস মশা দিনের বেলা কামড়ায়। আবার এরা একবারে একের অধিক ব্যক্তিকে কামড়াতে পছন্দ করে। তাই দিনে ঘুমালেও অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে।
৩।এ মশার ডিম পানিতে এক বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। বালতি, ফুলের টব, গাড়ির টায়ার প্রভৃতি স্থানে অল্প পরিমাণ জমে থাকা পানিও ডিম পরিস্ফুটনের জন্য যথেষ্ট।
৪।যেহেতু এডিস মশা স্থির পানিতে ডিম পাড়ে তাই যেন বাড়ির আশেপাশে পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
চিকুনগুনিয়া জ্বরের চিকিৎসা
চিকনগুনিয়া হলে যে সব খাবার খাবেনঃ
১।প্রচুর তরল পানীয় পান করুন। শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের সন্তলন বজায় রাখতে আপনি ফোটানো জলের সাথে ওড়াল রিহাইড্রেশান সল্টস পান করতেও পারেন। এটা আরও জরুরী যদি আপনার বমি হতে থাকত কিম্বা আপনার হজমের সমস্যা ছিল।
২।রস, বাটার-মিল্ক, ডাবের জল এবং তাজা সবজির রসের মত তরল পদার্থে প্রচুর অত্যাবশ্যক পুষ্টি থাকে, যা আপনার সুস্থ হয়ে ওঠাতে সাহায্য করে।
৩।নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে অল্প করে খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এতে দুর্বলতা এবং ক্লান্তি কেটে যায়। উচ্চ মাত্রার প্রোটিন এবং ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরে শক্তি তৈরি হয়। তবে প্রক্রিয়াকরণজাত খাদ্য এবং মিষ্টি খাবেন না কারণ এতে দেহের সুরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়।
৪।যদি আপনার পেটের কোন গোলমাল না থাকে তবে হালকা মশলা-যুক্ত খাবার খেতে নিষেধ নেই। এতে খাদ্য সুস্বাদু হবে। তবে অতিরিক্ত মশলা দিল অ্যাসিড রিফ্লাক্স হতে পারে।
৫।ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করে। তাই কমলালেবু, পেয়ারা, মিষ্টি আলু, লেবু এবং পেঁপের মত ফলগুলি নিরাময় হতে সাহায্য করবে।> সমৃদ্ধ ফল শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করে। তাই কমলালেবু, পেয়ারা, মিষ্টি আলু, <লেবু> এবং <পেঁপে>র মত ফলগুলি নিরাময় হতে সাহায্য করবে।
৬।নিরাময়ের সময় শরীরের জলের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া তরলগুলি, যেমন মদ, কফি বা চা পান করা থেকে বিরত থাকুন।
সাবধানতাই একমাত্র এই রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। এ রোগে মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা প্রাত্যহিক জীবনে অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই এ রোগ হয়েছে সন্দেহ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চিকুনগুনিয়া ব্যাথার চিকিৎসা,চিকুনগুনিয়া হলে করণীয়,ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার,ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার,ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ সমূহ কি কি,ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে,চিকুনগুনিয়া কোন ভাষার শব্দ,চিকনগুনিয়া কোন ভাষার শব্দ