বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার উপায়

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস সংক্ষিপ্ত রুপ বিসিএস নামে সর্বাধিক পরিচিত। বাংলাদেশের ভাল ছাত্র ছাত্রীদের সবার প্রথম পছন্দ থাকে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া । বিসিএস এর মাধ্যমে ভাল একটি সরকারি কর্মকর্তা হওয়া যায়। আজ বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।  এই বিসিএস প্রাক্তন সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস অব পাকিস্তান থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ব্রিটিশ পাবলিক সার্ভিস, পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস এর পরিণত রূপ হচ্ছে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়ম অনুযায়ী প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম শ্রেণির গেজেটভুক্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি প্রথম থেকে ভাল করে নিতে হবে, বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় ভাল করার কিছু উপায় আছে । ২৭টি ক্যাডারে বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্য থেকে এ জনবল নিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে সাধারণ, কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডার।

বিসিএস পাশ করার পর বিসিএস ক্যাডার বলা হয়। তিন ধাপে ( প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক) পরীক্ষার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন এই নিয়োগ প্রদানের কাজটি করে।

বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার উপায়

বিসিএস এমন একটি পরীক্ষা যার কোন নিদিষ্ট কোন বই বা কোন প্রাকার নিদিষ্ট পড়াশুনা নেই। আপনি যত টুকু ভাল প্রস্তুতি নিবেন সে ভাবে আপনার পরীক্ষা হবে । লিখিত পরীক্ষা প্রথমে নিয়ে থাকে ফলে এই পরীক্ষায় কিভাবে ভাল করতে পারবেন , সে বিষয় গুলি নিয়ে উপস্থাপন করব।

লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার আগে কিছু গুরুত্ব পূর্ণ তথ্য মনে রাখবেন

  • পড়ার সময় মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ হাতের কাছে রাখবেন না।
  • প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়াও বাদ দিন, যত বেশি সম্ভব পড়াশোনা করুন, দিনে কমপক্ষে ১৫ ঘণ্টা পড়ার চেষ্টা করুন।
  • কোচিংয়ে মডেল টেস্ট নাম্বার দিয়ে নিজেকে পুরোপুরি মূল্যায়ন করবেন না।
  • বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির জন্য প্রতিদিন ৪-৫টি পত্রিকা চোখ বুলাতে পরেন।
  • সব বিষয়ের সব টপিক অন্তত একবার হলেও পড়ে নিন  এর ফলে আপনার জানার পরিধি বাড়বে।
  • যেসব প্রশ্ন বারবার পড়লেও বুঝতে বা মনে রাখতে সমস্যা হয় সে সব প্রশ্ন বাদ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করবেন ।
  • কোন টপিক উত্তর করতে সর্বোচ্চ কত সময় নিবেন বা প্রশ্নের নাম্বার নিয়ে আগে দেখে নিবেন।
  • আপনি যদি কোন কাজ বা চাকরী করেন তবে  প্রস্তুতি নেওয়াটা বেশ কঠিন তাই একটু চেষ্টা করবেন পরীক্ষার আগে একটু বিরতি নেওয়ার।
  •  মধ্যরাত পর্যন্ত ম্যাথস্, গ্রামার, অনুবাদ, মানসিক দক্ষতা প্র্যাকটিস করতে পারেন কারণ গভীর রাতে নিরিবিলি পড়তে পারবেন।
  • সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, টিকা, শর্ট নোটস, সারাংশ, সারমর্ম, ভাবসম্প্রসারণ, অনুবাদ, ব্যাকরণ ইত্যাদি ভালোভাবে পড়ুন।
  • কিছু কিছু সেগমেন্টে গড়ে কম নম্বর ওঠে। বেশি মার্কস তোলা সম্ভব-এমন সেগমেন্ট ঠিক করে সেগুলোতে ভালো প্রস্তুতি নিন।

এই বিষয় গুলি ভাল করে মনেরেখে বিষয় ভিত্তক নিয়ে ভাবতে হবে । বিষয় ভিত্তিক নিয়ে গুছনো আলোচনা করব

ইংরেজি 

ইংরেজিতে ভালো করতে যে বিষয় টি মনে রাখতে হবে তাহল বানান ও গ্রামাটিক্যাল ঠিক করা। এই দুটি ব্যাপার ঠিক রেখে সহজ ভাষায় লিখে যান, ভাল ফলাফল আসবে বলে মনে করা হয়। ইংরেজি ১ম পত্রে ১০০ মার্কস বরাদ্দ থাকে কম্প্রিহেনসনের জন্য। কম্প্রিহেনসন প্র্যাকটিসের জন্য সবচেয়ে ভাল পন্থা হল এইচএসসির টেক্সটবুকটি অনুসরণ করা। কমপ্রিহেনশনের জন্য আইএলটিএস রিডিং পার্টের টেকনিকগুলো অনুসরণ করুন। বই থেকে গ্রামার ও ইউসেজ প্রচুর প্র্যাকটিস করুন।

দ্বিতীয়পত্রে রচনার জন্য ৫০ ও অনুবাদের জন্য ৫০ মোট এই ১০০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। রচনা সাধারনত সমসাময়িক বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে , ফলে সমসাময়িক বিষয় গুলি ভাল ভাবে দেখে নিতে হবে।  লেটারের জন্য পত্রিকার লেটার টু দি এডিটর অংশটি দেখুন। বাসায় বসে প্রতিদিন ৪০/৪৫ মিনিট ফ্রি হ্যান্ড চর্চা করুন।

বাংলা

ব্যাকরণ, ভাবসম্প্রসারণ , সারমর্ম (২-৩টি সহজ সুন্দর বাক্যে), অনুবাদ-এই টপিকগুলোতে সব সময় ভাল করে পড়তে হবে। অনেকে পত্র লেখার সময় নিয়ম ভুল করে থাকে , এই ভুল গুলি যতটুকু সম্ভব করা যাবে না। বাংলা ১ম পত্রে লিখিতের জন্য বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য প্রিলিমিনারিতেই অনেক ভাল করে পড়তে হবে।

কাল্পনিক সংলাপের জন্য বিভিন্ন সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে ধারণা বাড়াতে হবে।  প্রফেসরস/অ্যাসিউরেন্স এই দুটি বই পড়তে পারেন, এই বইতে অনেক সুন্দর করে দেওয়া আছে। দুটো বইয়েই ব্যাকরণ ও সাহিত্য অংশ সুন্দরভাবে দেয়া আছে। রচনা লেখার সময় মাইন্ড-ম্যাপিং করে পয়েন্ট ঠিক করে ঘণ্টা পড়ার আগ পর্যন্ত লিখতে থাকুন। আর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বানান ভুল না করতে।

সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি 

বিজ্ঞানে যথা সময়ের মধ্যে ১০০ মার্কসের উত্তর  দিয়ে আসা একটু কঠিন তবে অসম্ভব নয়। বিজ্ঞানের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আপনি বিজ্ঞানের ছাত্র কিংবা ছাত্র না, এটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেবেন না। বিজ্ঞানের জন্য মানবিক বিভাগের নবম-দশম শ্রেনির বই, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির মাহবুবুর রহমানের লেখা তথ্য প্রযুক্তি ও কম্পিউটার বই ও ওরাকল সিরিজের বইটি পড়তে পারেন। বিজ্ঞান বিষয়ে বেসিক বৃদ্ধির উপর বেশি জোর দিন। ভাল প্রস্তুতি হলে  বিজ্ঞানে অবশ্যই ভাল করা সম্ভব।

বাংলাদেশ বিষয়াবলি

বাংলাদেশ বিষয়াবলি কি ধরনের প্রশ্ন আসবে সেটা আগে ভাল করে দেখে নিতে হবে এর ফলে প্রস্তুতি  নিতে অনেক সহজ হবে। বাংলাদেশের সংবিধানের ব্যাখ্যা, বিভিন্ন সংস্থার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল, কিছু আন্তর্জাতিক পত্রিকা থেকে তথ্য-উপাত্ত দিন।  ডাটা, উদ্ধৃতির  জন্য আলাদা হ্যান্ডনোট ফলো করতে পারেন। প্রফেসরস,অ্যাসিউরেন্,স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস, অর্থনৈতিক সমীক্ষা এই বিষয় বেশি মনোযোগ দিতে হবে। সংবিধান যেসব ধারা থেকে বেশি প্রশ্ন আসে, সেগুলোর ব্যাখ্যা খুব ভালোভাবে বুঝে বুঝে পড়ুন।

গনিত ও মানসিক দক্ষতা

প্রতিরাতে চেষ্টা করবেন ম্যাথস প্র্যাকটিস করার এর ফলে গণিতের উপর আপনার দক্ষতা আরও বেড়ে যাবে । শর্টকাটে ম্যাথস করবেন না, প্রতিটি স্টেপ বিস্তারিতভাবে দেখাবেন। একটু বুঝেশুনে করলে  অঙ্কে ফুল মার্কস পেতে পারেন খুব সহজে। গনিতে ভাল করার জন্য প্রফেসরস গাইডের পাশাপাশি ৭ম-নবম শ্রেণির গনিত বই ও সিলেবাসের সাথে মিলিয়ে উচ্চতর গনিত অনুশীলন করতে পারেন।

মানসিক অংশের প্রশ্নগুলো সহজ হয়ে থাকে কিন্তু একটু বুদ্ধি খাটিয়ে বের করতে হয়। এই প্রশ্ন দেখে ভয় পেলে চলবে না ,মাথা ঠাণ্ডা রেখে, ভালোভাবে প্রশ্ন পড়ে, বুঝে, পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে উত্তর করতে হবে। ডাইজেস্টের পাশাপাশি ৩-৪টা আইকিউ টেস্টের বই সলভ করুন দেখবেন অনেক সহজ ভাবে মানসিক দক্ষতার প্রশ্ন গুলি উত্তর দিতে পারবেন।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি

আন্তর্জাতিক বিষয়ের জন্য সব সময় চেষ্টা করবেন পৃথিবীর সব আপডেট খবর গুলি সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে। যে টপিক আপনার জানার সীমা কম সেগুলি গুগলে সার্চ করে করে পড়তে পারেন। উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, বিভিন্ন সংস্থার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের সাহায্য নিন। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের জন্য ৪০ ও বড় প্রশ্নের জন্য ৬০ মার্কস বরাদ্দ থাকে।  অ্যাসিরেন্স সিরিজের গাইড ও আব্দুল হাই এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক,সংগঠন ও পররাষ্ট্রনীতি বই দুটো আপনার পড়ার টেবিলে রাখতে পারেন। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও আপনার নিজের মতামত ইত্যাদি পয়েন্ট আকারে লিখুন।  খুব ভাল ভাবে আন্তর্জাতিক বিষয়ে জানতে ভালো করার জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়ার বিকল্প নেই।

 

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার জন্য আপনার সর্বোচ্চ চেষ্টার কোন বিকল্প নেই। ভাল প্রস্তুতি ছাড়া কোন দিন পরীক্ষার ভাল করা সম্ভব না। কোন বিষয় গুলি পড়বেন সেটা ঠিক করার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কী কী পড়বেন না সে গুলি আগে ঠিক করে রাখা।

সব বিষয় মুখস্থ করার দরকার নেই, শতভাগ শিখেছি ভেবে  ঠিকমতো কাজে লাগানোই একটি আর্ট।  লিখিত পরীক্ষায় ভাল নম্বর অর্জন করতে পারলে চূড়ান্ত রেজাল্টে আপনার সাফল্যের হার অনেকাংশে বেড়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেনঃ kfsoft@yahoo.com যে কোন প্রয়োজনেঃ kfplanetbd@gmail.com