আল্লাহ তাআলা পরিপূর্ণ হেকমত অনুযায়ী রোযার বিধান জারী করেছেন। রোজা থাকতে হয় সুবেহ সাধেক থেকে সূর্য অস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা। রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ কি কি সেগুলি আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরব। রোযাদারকে ভারসাম্য রক্ষা করে রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন; একদিকে যাতে রোযা রাখার কারণে রোযাদারের শারীরিক কোন ক্ষতি না হয়। অন্যদিকে সে যেন রোযা বিনষ্টকারী কোন বিষয়ে লিপ্ত না হয়। সাওম ভঙ্গের কারণ সমূহ নিয়ে আমরা বিভিন্ন সময় অনেক প্রশ্ন বিদ্ধ হয় যেমন,স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙ্গে?নফল রোজা ভঙ্গের কারণ,রোজা ভঙ্গের কাফফারা, হস্তমৈথুন, মহিলাদের হায়েয ও নিফাসের রক্ত বের হওয়া,বমি করা ইত্যাদি তাই আমরা আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব। মহা উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহগণ পবিত্র রমজান পালন থাকে।
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ কি কি?
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ কি কি আমাদের মধ্যে অনেকে জানে না। আপনারদের আজ সুন্দর ভাবে সিয়াম ভঙ্গের কারন গুলি উপস্থাপন করব। রোযা-ভঙ্গের বিষয়গুলো দুইভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।
রোজা ভঙ্গের কিছু বিষয় রয়েছে যা শরীর থেকে কোন কিছু নির্গত হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত যেমন- সহবাস,ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা, মহিলাদের হায়েয ও নিফাসের রক্ত বের হওয়া,শিঙ্গা লাগানো কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন কারণে রক্ত বের করা। আর কিছু রোজা ভঙ্গের বিষয় রয়েছে সেগুলো শরীরে প্রবেশ করানোর সাথে সম্পর্কযুক্ত । যেমন- খাওয়া দাওয়া বা কোনো কিছু পানাহার করা।
কোরআনে কারমে সূরা বাকারা ১৮৭ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সাওম ভঙ্গের কারণ গুলোর মূলনীতি উল্লেখ করেছেন।
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহঃ
- ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা
- পানাহার করা
- এমন কিছু যা পানাহারের স্থলাভিষিক্ত
- স্ত্রী সহবাস করা
- হস্তমৈথুন
- শিঙ্গা লাগানো কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন কারণে রক্ত বের করা
- মহিলাদের হায়েয ও নিফাসের রক্ত বের হওয়া
- জবরদস্তি করে কেহ রোজা ভাঙ্গালে
- ইনজেকশান বা স্যালাইরনর মাধ্যমে দেমাগে ওষধ পৌছালে
- কংকর পাথর বা ফলের বিচি গিলে ফেললে
- সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে ইফতার করার পর দেখা গেল সুর্যাস্ত হয়নি।
- পুরা রমজান মাস রোজার নিয়ত না করলে।
- দাঁত হতে ছোলা পরিমান খাদ্য-দ্রব্য গিলে ফেললে।
- ধূমপান করা, ইচ্ছাকৃত লোবান বা আগরবাতি জ্বালায়ে ধোয়া গ্রহন করলে।
- রাত্রি আছে মনে করে সোবহে সাদিকের পর পানাহার করলে।
- মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সুবহে সাদিকের পর নিদ্রা হতে জাগরিত হওয়া এ অবস্থায় শুধু কাজা ওয়াজিব হবে।
রোজা ভঙ্গের কারণ দলিল সহ
রোজা ভঙ্গের কারণ দলিল সহ না থাকেন কোন ভিত্তি থাকবে না। বর্তমানে ইসলাম ধর্মে অনেক মিথ্যা নিয়ম চালু হয়ে গেছে । সেজন্য চেষ্টা করতে হবে দলিল সহ সিয়াম ভঙ্গের কারন গুলি তুলে ধরতে।
- শিঙ্গার কারণে সাওম ভাঙ্গবে না ভেবে কেউ শিঙ্গা লাগাল, তাহলে তার সাওম বিশুদ্ধ। কারণ, সে শিঙ্গার হুকুম সম্পর্কে জানে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,আর এ বিষয়ে তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোন পাপ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে (পাপ হবে)। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫]।
- সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত, আদি ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু আনহু সাদা-কালো দুটি দাগা বালিশের নিচে রেখে তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে খেতে ছিলেন, যখন একটি অপরটি থেকে পৃথক ও স্পষ্ট দেখা গেল, তিনি পানাহার থেকে বিরত থাকলেন। কারণ, তিনি মনে করেছেন এটাই আল্লাহর নিম্নের বাণীর অর্থ: আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। [সূরা আল বাকারা আয়াত: ১৮৭]
- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: “এর অর্থ হচ্ছে দিনের সাদা আভা ও রাতের কালো অন্ধকার”। তিনি তাকে সে দিনের সাওমের কাযা করতে বলেন নি। – সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯১৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৯০।
- যদি ফজর উদিত হয় নি অথবা সূর্যাস্ত হয়ে গিয়েছে ভেবে পানাহার করে অতঃপর তার বিপরীত প্রকাশ পায়, তাহলে তার সাওম বিশুদ্ধ। কারণ, সময় সম্পর্কে তার জানা ছিল না। সহীহ বুখারীতে আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে একদা মেঘলা দিনে আমরা ইফতার করি, অতঃপর সূর্য উদিত হয়। – সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৫৯।
- সাওম অবস্থায় যে ভুলে পানাহার করল, সে যেন তার সাওম পূর্ণ করে। কারণ, আল্লাহ তাকে পানাহার করিয়েছেন।
সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৩৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৫। - মিসওয়াক করলে সাওম ভঙ্গ হবে না, বরং দিনের শুরুতে অথবা দিনের শেষে সাওম পালনকারী ও সাওমহীন সবার জন্য মিসওয়াক করা সুন্নাত।নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম অবস্থায় গরমের কারণে মাথায় পানি দিতেন।আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৬৫।